মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

সাদা টাকা কালো টাকা




নুর“ল ইসলাম বিএসসি
টাকা সাদাও হয় না, কালোও হয় না। টাকা টাকাই। আমরা সবাই যাকে কালো টাকা বলে আখ্যায়িত করছি, এগুলো ট্যাক্সবিহীন অপ্রদর্শিত আয়। এ অপ্রদর্শিত আয় বর্ধনে সরকারি-বেসরকারি অনেকে জড়িত থাকলেও, মূল মালিকের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশিত হয়। আঙ্গুল তোলা হয়; কিš‘ পয়েন্টে যাওয়া সম্ভব নয়, অর্থাৎ কালো টাকার মালিককে জনসমক্ষে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা আছে, কোথায় আছে, কি হালতে আছে, দেশে আছে নাকি বিদেশের কোন ব্যাংকে আছে, তা নিরূপণ করার কৌশল ও প্রযুক্তি এ মুহূর্তে নেই। নৈতিকতার বিচারে এদের ছাড় দেয়া না গেলেও, বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য রেখে এবার বাজেটে ছাড় অর্থাৎ সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। 
অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতিবিদ ফেডারিক স্লাইডার, যিনি বর্তমানে কালো টাকার বিশেষজ্ঞ বলে খ্যাত, তার সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ মোট উৎপাদনের শতকরা ৩৭ ভাগ। হিসাব করলে দাঁড়ায় দেড় লাখ কোটি টাকা। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৪৬/৮১ শতাংশ। যার হিসাব নিলে দাঁড়ায়, এক লাখ নব্বই হাজার কোটি টাকা, যা এবারের বাজেটের সমান।
কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা, অপ্রদর্শিত টাকাকে কৌশলে বিনিয়োগে নিয়ে আসা এবং করের জালে, সময়ের সঙ্গে তাল রেখে আবদ্ধ করাÑ এই কৌশল দীর্ঘমেয়াদি না হয়ে স্বল্পমেয়াদি হলে, খুব বেশি লোক সুযোগ গ্রহণ নাও করতে পারে।
শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে অন্তত দশ বছর সময় বেঁধে দিলে, প্রথম বছরে যারা শিল্প-কারখানায় শতকরা দশ ভাগ কর দিয়ে বিনিয়োগ করবে এবং আগামী দশ বছর উৎস ঘোষণা থেকে অব্যাহতি দিলে, আমার বিশ্বাস সুফল পাওয়া যাবে।
এক লাখ নব্বই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বাইরে রাখা হবে, নাকি কৌশলে এর বেশির ভাগ অংশ বিনিয়োগে নিয়ে আসা হবে, এখন এটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার যে কৌশল নিয়েছে, তা যথার্থ। এটাকে আরও সম্প্রসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি করলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 
নৈতিকতার বিচারে একজন ট্যাক্স না দিয়ে টাকা লুকিয়ে রাখবেন, এটা সমর্থনযোগ্য নয়। কিš‘ প্রশ্ন জাগে, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে নৈতিকতা নিয়ে ভাবে কয়জন! সুতরাং বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে এবং বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য রেখে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। 
ঘুষ-দুর্নীতি অনৈতিক কাজ হলেও, মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে অনেকে টেবিলে বসে ঘুষ গ্রহণ করেন। ঘুষ-দুর্নীতি এখন প্রায় নিয়ম-নীতিতে পরিণত হয়েছে। মানি লন্ডারিং আইনের কারণে অনেকেই এখন ঘুষের টাকা ব্যাংকে জমা করে না। ঘরেই বড় নোট করে, ডলার কিনে বা স্বর্ণ কিনে রেখে দি”েছ। ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। কত হাজার কোটি টাকা এখন বাক্সবন্দি, আল্লাহই জানেন। 
অভ্যন্তরীণ লেনদেনে মানি লন্ডারিং আইনকেও শিথিল করা বাস্তবসম্মত হবে। ঘুষ-দুর্নীতি রোধ করার সং¯’া আছে। ব্যাংক কেন টাকার উৎস খুঁজতে যাবে? ব্যাংক টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে সঞ্চয় থেকে বঞ্চিত হ”েছ। এখন এটাই বাস্তবতা। 
আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে নৈতিকতার বিচার না করে, বাস্তবতার নিরিখে অন্তত অর্থনৈতিক দিকগুলো বিবেচনা করা দরকার। নৈতিকতা নিয়েও যতদূর সম্ভব বাস্তবতার নিরিখে অর্থনীতিকে সাজাতে হবে।
নুর“ল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক

বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১২

মাননীয় আজিমরা এখন কী বলবেন?


নুর“ল ইসলাম বিএসসি
একটি মাত্র পত্রিকার খবর পড়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে মাননীয় সংসদ সদস্য ফয়জুল আজিম অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। অধ্যাপক সাহেব যে কথা বলেননি, যার সিডি আলোচনাকারীদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, তা থেকেই সত্য কথাটি বের হয়ে আসবে। আরও দু’জন সংসদ সদস্য এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। 
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে সংসদে মিথ্যা একটা খবরের ওপর ভিত্তি করে হেন¯’া করার প্রস্তাবনা বিবেকবান মানুষের হজম করতে কষ্ট হওয়ার কথা। একজন সংসদ সদস্য ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে যা ই”ছা তাই করতে পারেন না। কবে মানুষ ভোট দেবেন, বিচার হবে, তার অপেক্ষায় থাকলে ওই সংসদ সদস্য তো আরও বেপরোয়া হয়ে যাবেন।
আমরা লক্ষ্য করছি, বিএনপি সংসদে যায় না। জনাব ফয়জুল আজিম সাহেবের মুখ দিয়েই বিএনপি এখন কথা বলে। সর্ববিষয়ে কথা বলে সরকারের সমালোচনা করে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করতে তিনি তৎপর। তার পাতা ফাঁদে কেন মহাজোটের শরিক দু’জন অংশগ্রহণ করলেন, বলা মুশকিল।
আজকে একটি জাতীয় দৈনিকে একজন মন্ত্রীর ছয়টি প্লট নিয়ে ব্যানার হেডিং হয়েছে। ওই মন্ত্রীর দামি গাড়ি উপহার নেয়ার বিষয়েও কথা উঠেছে মঙ্গলবার (০৫/০৬/২০১২)। দেখি, জনাব ফয়জুল আজিম আজ কি করেন! অবশ্য পরের দিন মন্ত্রী মহোদয় একটি ব্যখ্যাও দিয়েছেন। একই মন্ত্রী ঢালাওভাবে সব শিল্পপতি, ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দেন বলে বলেছেন। এটা তার আবিষ্কার। এ কথা বলে তিনি সব শিল্পপতি, ব্যবসায়ীকে অপমান করেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সংসদের মতো একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে সত্য, মিথ্যা বিচার না করে যারা অধ্যাপকের বির“দ্ধে বিবৃতি দিলেন, তারা সংসদের ভাবমূর্তি নষ্ট করলেন, নাকি যিনি কিছুই বলেননি, তিনি করলেন। 
কোন সংসদ সদস্য আইনের ঊর্ধ্বে নয়। পিস্তল উঠিয়ে মানুষ তাড়া করা সংসদ সদস্যের কাজ নয়। সব সংসদ সদস্য মন্দ বা সব সংসদ সদস্য ভালো, হলফ করে কেউ বলতে পারবেন না। ভালো-মন্দ মিলিয়ে এ সংসদ। তবে সিংহভাগ সংসদ সদস্যরা যোগ্য, সৎ ও দক্ষ। অনেকের ভুল-ক্রটিও আছে। ভুল-ত্র“টিগুলো হƒদয় দিয়ে বিচার করলে সহজে মিটে যায়। আমি নিজেও একবার লালদীঘির মাঠে একজন সম্মানীত সংসদ সদস্যের পরিবার নিয়ে কথা বলে নিজের কাছে ছোট হয়ে গেছি। ওই কথার জন্য নিজের মনের দহনে ভুগছি। দুঃখিত যে, তার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর অধিকার হারিয়েছি। 
এখন কথা হল, সব কথা সংসদে আলোচিত হবে, এমন কথা নেই। দেশের হাজারও সমস্যা আছে, যা আলোচনায় এলে মানুষের দুঃখ, দুর্দশার অনেক লাঘব হয়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সাহেব যা বলেননি তা খামাখা সংসদে টেনে এনে মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আজিম সাহেব সরকারকে ফাঁদে ফেলে দিয়েছেন। টিআইবির বিপরীতে সরকারকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যারা বিবেকবান মানুষ, তারা অধ্যাপক সায়ীদ সাহেবের পক্ষে কথা বলছেন।
সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের অনেকে এসব ব্যতিক্রম নিয়ে কটাক্ষ করেন। উত্তর দিতে পারি না বলেই কটাক্ষ এড়াতে পত্রিকায় আনলাম। মাননীয় ডেপুটি স্পিকার সাহেব সময়মতো কথা না বললে মাঠ আরও গরম হওয়ার কথা ছিল। মাননীয় ডেপুটি স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই বলে শেষ করতে চাই যে, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ফয়জুল আজিম সাহেব প্রত্যেকটি বিষয়ে বিরোধিতা করে অনুপ¯ি’ত বিএনপির পক্ষেই কাজ করে যা”েছন। সেক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে, যাতে তার পাতা ফাঁদে পা না পড়ে।
নুর“ল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক