নুর“ল ইসলাম বিএসসি
টাকা সাদাও হয় না, কালোও হয় না। টাকা টাকাই। আমরা সবাই যাকে কালো টাকা বলে আখ্যায়িত করছি, এগুলো ট্যাক্সবিহীন অপ্রদর্শিত আয়। এ অপ্রদর্শিত আয় বর্ধনে সরকারি-বেসরকারি অনেকে জড়িত থাকলেও, মূল মালিকের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশিত হয়। আঙ্গুল তোলা হয়; কিš‘ পয়েন্টে যাওয়া সম্ভব নয়, অর্থাৎ কালো টাকার মালিককে জনসমক্ষে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা আছে, কোথায় আছে, কি হালতে আছে, দেশে আছে নাকি বিদেশের কোন ব্যাংকে আছে, তা নিরূপণ করার কৌশল ও প্রযুক্তি এ মুহূর্তে নেই। নৈতিকতার বিচারে এদের ছাড় দেয়া না গেলেও, বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য রেখে এবার বাজেটে ছাড় অর্থাৎ সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতিবিদ ফেডারিক স্লাইডার, যিনি বর্তমানে কালো টাকার বিশেষজ্ঞ বলে খ্যাত, তার সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ মোট উৎপাদনের শতকরা ৩৭ ভাগ। হিসাব করলে দাঁড়ায় দেড় লাখ কোটি টাকা। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৪৬/৮১ শতাংশ। যার হিসাব নিলে দাঁড়ায়, এক লাখ নব্বই হাজার কোটি টাকা, যা এবারের বাজেটের সমান।
কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা, অপ্রদর্শিত টাকাকে কৌশলে বিনিয়োগে নিয়ে আসা এবং করের জালে, সময়ের সঙ্গে তাল রেখে আবদ্ধ করাÑ এই কৌশল দীর্ঘমেয়াদি না হয়ে স্বল্পমেয়াদি হলে, খুব বেশি লোক সুযোগ গ্রহণ নাও করতে পারে।
শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে অন্তত দশ বছর সময় বেঁধে দিলে, প্রথম বছরে যারা শিল্প-কারখানায় শতকরা দশ ভাগ কর দিয়ে বিনিয়োগ করবে এবং আগামী দশ বছর উৎস ঘোষণা থেকে অব্যাহতি দিলে, আমার বিশ্বাস সুফল পাওয়া যাবে।
এক লাখ নব্বই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বাইরে রাখা হবে, নাকি কৌশলে এর বেশির ভাগ অংশ বিনিয়োগে নিয়ে আসা হবে, এখন এটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার যে কৌশল নিয়েছে, তা যথার্থ। এটাকে আরও সম্প্রসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি করলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
নৈতিকতার বিচারে একজন ট্যাক্স না দিয়ে টাকা লুকিয়ে রাখবেন, এটা সমর্থনযোগ্য নয়। কিš‘ প্রশ্ন জাগে, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে নৈতিকতা নিয়ে ভাবে কয়জন! সুতরাং বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে এবং বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য রেখে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
ঘুষ-দুর্নীতি অনৈতিক কাজ হলেও, মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে অনেকে টেবিলে বসে ঘুষ গ্রহণ করেন। ঘুষ-দুর্নীতি এখন প্রায় নিয়ম-নীতিতে পরিণত হয়েছে। মানি লন্ডারিং আইনের কারণে অনেকেই এখন ঘুষের টাকা ব্যাংকে জমা করে না। ঘরেই বড় নোট করে, ডলার কিনে বা স্বর্ণ কিনে রেখে দি”েছ। ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। কত হাজার কোটি টাকা এখন বাক্সবন্দি, আল্লাহই জানেন।
অভ্যন্তরীণ লেনদেনে মানি লন্ডারিং আইনকেও শিথিল করা বাস্তবসম্মত হবে। ঘুষ-দুর্নীতি রোধ করার সং¯’া আছে। ব্যাংক কেন টাকার উৎস খুঁজতে যাবে? ব্যাংক টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে সঞ্চয় থেকে বঞ্চিত হ”েছ। এখন এটাই বাস্তবতা।
আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে নৈতিকতার বিচার না করে, বাস্তবতার নিরিখে অন্তত অর্থনৈতিক দিকগুলো বিবেচনা করা দরকার। নৈতিকতা নিয়েও যতদূর সম্ভব বাস্তবতার নিরিখে অর্থনীতিকে সাজাতে হবে।
নুর“ল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক